সর্বশেষ :
শান্তিগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে জেলের মৃত্যু বিয়ানীবাজারে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন চাঁদাবাজিসহ একাধিক অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক রাজিব শোকজ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিচ্ছে ইসি সিলেটে দলীয় সভায় নেতাদের বাকবিতন্ডা ও ‘কল-কাণ্ডে’র ঘটনায় বিএনপির দুই তদন্ত কমিটি নবীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করছে, কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত ভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা শাকিবের নায়িকা হিসেবে সাবিলা নূরকে নিয়ে কে কী লিখছেন স্থায়ী কমিটির বৈঠক : ডিসেম্বরে নির্বাচন আদায়ে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি সরকারকে শেষ বার্তা দিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক
স্বপ্নভঙ্গের গল্প: অখন না পারমু কাম করি খাইতাম, না পারমু বিয়া বইতাম

স্বপ্নভঙ্গের গল্প: অখন না পারমু কাম করি খাইতাম, না পারমু বিয়া বইতাম

স্টাফ রিপোর্টার
কিতা কইতাম গো বইন টেকার আশায় বিদেশ গিয়া সবতা আরাইছি এমন অত্যাচার করছে অখন না পারমু কাম করি খাইতাম, না পারমু বিয়া বইতাম।
কান্না ধরা কন্ঠে এমন কথা গুলো বলছিলেন বিদেশ ফেরত নারী মোছাম্মদ শাহেনা বেগম (ছদ্মনাম) ।

টাকার জন্য দেশের মাটি ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু স্বপ্নপূরণ নয়, বরং দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেয় সেই প্রবাসজীবন। এমনই দুই নারীর গল্প তুলে ধরছে এই প্রতিবেদন, যারা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজের জীবনকেই বাজি রেখেছিলেন। কিন্তু ফিরে এসেছেন নিঃস্ব, ভেঙে পড়া মন ও শরীর নিয়ে।

শাহেনা সিলেটের মোগলাবাজাররে মেয়ে,বাবা মার একমাত্র সন্তান তিনি। ২০১৪ সালে তার স্বামী মারা যান, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আসেন বাবার বাড়িতে কিন্তু কপালে সুখ না থাকায় শেষ ভরসার জায়গাও হারাতে হয় তাকে। ২০১৭ সালে শাহেনার বাবা মারা যান দিশেহারা হয়ে গৃহকর্মীর ভিসায় ২০১৯ সালে জীবীকার তাগিদে ৪ বছরের একমাত্র সন্তান ও মাকে দেশে রেখে পাড়ি জমান সৌদিআরব।

প্রথম তিন বছর ভালোই কাটে শাহেনার জীবন যাপন মাঝখানে একবার মা ও সন্তানকে দেখতে ছুটেতে আসেন তিনি। তার পরে আবার ফিরে যান আর সেই থেকে শুরু হয় তার উপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন।

শাহেনা আগের যে মালিকে বাসায় কাজ করতেন ঐ মালিক তাকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন শুধু তাই নয় এক এক করে ৬ জায়গায় বিক্রি করা হয় তাকে। অবশেষে যে বাসায় দেওয়া হয় সেই নতুন বাসায় শুরু হয় তার প্রতি অমানবিক নির্যাতন, সারা দিন কাজ করার পরও ঠিক মতো খেতে দিতো না সবাই মিলে মারধর করতো। তাছাড়াও নতুন মালিকের ছেলে নানা ভাবে যৌন হয়রানি করতো, কথা না শুনলে চলতো নানা রকম অত্যাচার, শুরু তাই নয় শাহেনাকে তারা বেশিরভাগ সময় বাথরুমে বন্দি করে রাখতো। কোন টাকাপয়সা দিত না এমন কি তিনি বলেন তার পাসপোর্টও তারা তাদের কাছে নিয়ে জিম্মি করে রাখে।
একদিন সুযোগ বুঝে শাহেনা পালিয়ে যান এবং ৯৯৯ এ কল করে সাহায্য চান। তার পর সৌদিআরবের প্রশাষনের সাহায্যে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

শুধু শাহেনা নয় লেবাননের কমর্রত ছিলেন জাসমিন বেগম (ছদ্মনাম) সেখানেও শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। জাসমিন চার ভাই বোনের মধ্যে বড় তাই অসুস্থ বাবা সহ সংসারে সবার দায়িত্ব স্বামী পরিত্যক্ত জাসমিনের কাঁধে। তারও আবার দশ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে সবার কথা চিন্তা করে এক বুক আশা নিয়ে তিনি প্রবাসে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস শুরু থেকেই তাকে নানান নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, এক বছর একই বাসায় অনেক কষ্ট করে কাজ করেছেন তিনি। সারা দিন কাজ করার পর পেট ভরে খেতে দিতো না তাকে, কিছু বললে মারধর করতো। একদিন তিনি সুযোগ পেয়ে তাদের বাসা থেকে পালিয়ে যান এবং পরিচিত এক মহিলার সহযোগিতায় একটি দোকানে মাত্র সাত হাজার টাকায় কাজ করার সুযোগ পান কিন্তু এ ভাবে নিজের খরচ চালিয়ে দেশে টাকা পাঠানো সম্ভব হতো না তাই তিনি ওখানকার দোদাবাসের সহযোগিতা দেশে ফিরে আসেন।

এখানেই শেষ নয় দেশে ফেরার পর তাদেরকে সম্মুখীন হতে হয়েছে আরেক কঠিন পরিস্থিতির। সাধারণত বিদেশে কাজ করতে গিয়ে ফিরে আসা নারীরা বেশ কিছু সামাজিক, আর্থিক, এবং মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় শারীরিক ও মানুষিক ভাবে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এর মধ্যে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে কঠিন আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হন তারা ।

তবে তারা জানান- এই দুঃসময়ে তাদের পাশে ব্র্যাক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

বিলাত (যুক্তরাজ্য) থেকে ফিরে আসা অনেক নারী অভিবাসী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। প্রতারণা, শোষণ ও মানব পাচারের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরার পরও তাঁদের জীবন সংগ্রাম থেমে থাকে না। এই নারীদের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টিআইপি হিরো অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত আল-আমিন নয়ন বলেন – বিলাত ফেরত অনেক নারী অভিবাসী এমন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে গেছেন, যা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কষ্টকর ও হৃদয়বিদারক। অনেকেই প্রতিশ্রুত চাকরির বদলে শোষণের শিকার হয়েছেন, তাঁদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, কখনো কখনো তাঁরা মানব পাচারের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছেন। দেশে ফিরে তাঁরা আবারও এক নতুন লড়াইয়ের সম্মুখীন হন—সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক চাপে ভেঙে পড়েন অনেকেই।

তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টার থেকে আমরা চেষ্টা করি তাঁদের পাশে থাকার। শুধু মানসিক সহায়তা নয়, আমরা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, আইনি পরামর্শ এবং বিকল্প জীবিকার সুযোগ তৈরি করি, যেন তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। আমাদের লক্ষ্য, এসব নারী যেন আত্মমর্যাদার সঙ্গে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। তাঁদের সংগ্রাম আমাদের দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে ব্র্যাকের এমআরএসসি মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়কারী শুভাশীষ দেবনাথ বলেন- অভিবাসনের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য ও প্রস্তুতির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি, যাতে তারা নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের পথে এগোতে পারেন। অনেকেই প্রাথমিক তথ্য না জানার কারণে প্রতারিত হন বা নানা জটিলতায় পড়েন। আমাদের লক্ষ্য হলো সেই ঝুঁকি কমিয়ে আনা এবং অভিবাসনের প্রতিটি ধাপে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা। সিলেট অঞ্চলে আমরা স্থানীয় সংগঠন ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছি, যেন প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও এই সেবা পৌঁছায়। অভিবাসনের সুযোগ যেন সবার জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই হয় – এটাই আমাদের চাওয়া।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.




© All rights reserved ©ekusheysylhet.com
Design BY DHAKA-HOST-BD
weeefff